Probashi

এক পরিযায়ী পাখী : শামুকখোল

bird1

সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে নগরায়ন। আমরা মানুষ, নিজেদের আমরা উন্নত প্রাণী বলে ভাবি। আমরা মনে করি এই পৃথিবী এবং প্রকৃতির সমস্ত সম্পদ কেবল মানুষের। কয়লা, পেট্রোলিয়াম, অরণ্যের কাঠ আর জানোয়ার, সমুদ্র ও নদীর জল, সে জলে বসবাসকারী মাছ, প্রবাল, অন্যান্য দুষ্প্রাপ্য প্রাণী, সূর্য়ের আলো, বাতাসের গতি সবই আমাদের, মানে মানুষের ইচ্ছে মত ব্যবহারের জন্য। গাছপালা কেটে ফেলেছি যেখানে সেখানে যত ইচ্ছে, জীবজন্তু হত্যা করেছি যেমন খুশী। নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি। পৃথিবীটাকে এক ধ্বংসের মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দিয়েছি আমরা। কিছু প্রজাতি এখনোও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক দিন, প্রতি মুহূর্তে, আমরা ছিনিয়ে নিচ্ছি তাদের খাদ্য, বাসস্থান, বেঁচে থাকার অধিকার।

bird2

আমার রোজকার যাতায়াতের পথে, রাস্তার এক জায়গায়, দুপাশের গাছ্গুলোতে, প্রতি বছর বর্ষায় এই পরিযায়ী শামুকখোল পাখীর দল আসে, বাসা বাঁধে। জৈষ্ঠ্যমাসের শেষ দিকে মানে জুন মাসের মাঝামাঝি এরা আসে; আবার কার্তিক মাসের শেষের দিকে, অর্থাত, নভেম্বরের মাঝামাঝি এরা চলে যায়। আজকাল গুগলের কল্যাণে আমরা সকলেই যে কোনো বিষয়েই অল্পবিস্তর এক্সপার্ট্, তথ্য সংগ্রহ করাও সহজ, যে কোনো জ্ঞানভান্ডার আমাদের হাতের নাগালে। যায়। জানিনা এদের বৈজ্ঞানিক নাম, খাদ্যাভ্যাস, অন্যান্য বৈশিষ্ঠ্য। ইংরাজীতে এদের বলে Gendalia, স্থানীয় ভাষায় ‘গেন্ডালিয়া’| সঙ্গীতের ব্যকরণ না জেনেও যেমন গান সঙ্গীতের ব্যকরণ না জেনেও যেমন গান ভালো লাগে, রন্ধনপ্রণালী না জানলেও যেমন খাদ্যের রস গ্রহন করতে অসুবিধা হয় না, দু একটা কঠিন শব্দের অর্থ না বুঝেও যেমন পুরো গল্পের মানে বুঝতে পারা যায়, তেমনি, এই পাখীদের সম্বন্ধে সব কিছু না জানলেও, রোজ রোজ আসা যাওয়ার পথে কেবল এদের অবিশ্রান্ত ওড়াউড়ি দেখতে ভালো লাগে। মন উদাস হয়ে যায়। আকাশে ঘন কালো মেঘ, বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকা স্তব্ধ চরাচর, ইতস্ততঃ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঢ্যাঙ্গা ক্যাসুরিনা গাছগুলোকে জড়িয়ে ওঠা ঘন সবুজ লতাগুল্ম, জংলী ঘাসে ঢাকা ঝিম মেরে থাকা জলাভূমি, গত আশ্বিনের ঝড়ে উত্পাটিত দু একটা বড় গাছের মাটি কামড়ে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা, চারিদিকে বুনো গন্ধ, জলের উপর জেগে থাকা শাপলা ফুলের পাপড়িতে চুমো খেয়ে ফড়িং আর অন্য নাম না জানা পোকাদের উড়ে যাওয়া, রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা দূরে ঝাকড়া গাছের মগডালে অসংখ্য শামুকখোলের বসে থাকা এক অপূর্ব দৃশ্যকল্প তৈরি করে। এই প্রাকৃতিক দৃশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমার জীবনের ঘটনাবলী, কর্মক্ষেত্রে পরিবেশের অবনতি, সহকর্মীর পদন্নতি, অফিসের রাজনীতি, সেখানে স্তুপীকৃত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, যান্ত্রিক সভ্যতার পরিত্যাক্ত অব্যবহৃত জঞ্জাল, সব বড় অর্থহীন মনে হয়। বয়ে যাওয়া সময় আর অনাদিঅনন্ত কাল ধরে পরিযায়ী পাখীদের গতায়াতটুকুই কেবল ধ্রুব সত্যের মত জেগে থাকে।

bird3

আমি কোনো পক্ষীবিশারদ নই, পক্ষীপ্রেমীও নই, কেননা, আজ পর্যন্ত করতলে কোনো পক্ষী শাবক ধরিনি কখনোও। কাক, চড়াই, শালিখ, ফিঙে, ছাতারে, হাঁস, মুরগী, ময়না, দোয়েল, মৌটুসী, টুনটুনি, পেঁচা, টিয়া, পায়রা, ঘুঘু, ইত্যাদি গতানুগতিক কিছু পাখী ছাড়া আমি অন্যান্য পাখীদের ভলো করে চিনিনা পর্যন্ত।

আমি কেবল দর্শনবিলাসী,
তাই দেখতে ভালোবাসি।

bird4

 

এই সব জলাভূমি, নিভৃত অরণ্য সম্পদ,
তুচ্ছ করা ছোটখাটো আপদ বিপদ,
এইখানে ফিরে আসা আসা বছর বছর,
এক ঋতুর বসবাস, বাসা বাঁধা; ঘর।

 

 

 

bird5

 

 

 

ঋতুচক্র কেটে যায় সময় অনুসার,
দিন, মাস, সপ্তাহ, বছর হয় পার;
আকাশ মেঘের চিঠি যবে থেকে পায়,
আমাদেরও কানে কানে খবর পাঠায়,
বৃষ্টির চুম্বনের প্রবল প্রত্যাশায়,
গাছের নতুন পাতা থাকে প্রতীক্ষায়,
বাতাস গরম, জলভাপ ভরে ওঠে,
তৃষ্ণাও সুখ হয়ে ফোটে দুই ঠোঁটে।

 

bird6

 

 

 

চলো, ওড়ো ওড়ো, পথে নামো সাথী,
একবারই থামা, যখন স্তব্ধ হবে গতি,
ছিঁড়ে ফেলো পিছুটান, রুদ্ধ যদি গতি,
কানে কানে বলো, চরৈবেতি, চরৈবেতি।

 

 

bird7

 

 

 

 

খোঁজো, বেঁচে থাকবার সব উপকরণ,
এক ঋতু কাটাবার সব আয়োজন,
তুলে আনা খড়কুটো, বেঁধে নাও বাসা,
খুঁজে দেখো কার কাছে মেলে ভালবাসা

 

 

bird8

 

 

 

বৃষ্টিতে ধারা স্নান, আলো মাখো গায়ে,
তারপর ডেকে নাও, ঠোঁটের ইশারায়,
প্রিয়া মুখ চুম্বন, প্রিয় খেলা, রমণ,
প্রাণ নিয়ে জন্মাবার উদ্দেশ্য সাধন,
অনুভব করা, নতুন প্রাণের স্পন্দন,
পৃথিবীতে বেঁচে থাক আমাদের সন্তান।

 

bird9

 

 

 

 

ঋতু শেষ হয়, আসে ফেরবার চিঠি,
আবার নতুন শুরু, মুছে যাক স্মৃতি,
আমি, সে ও সখা মিলে যে গান গেয়েছি,
শেষ বৃষ্টিফোঁটা দিয়ে সে সুর ধুয়েছি,
আবার নতুন করে বেঁধে নেব সুর,
চলো আজ উড়ে যাই, ডাকছে সুদূর॥


4 Comments »

  1. Comment by chitta roy

    Excellent article.

  2. Comment by Dr.Nibedita Mitra

    Excellent writing with extra ordinary photography ! Proud to be Sucharita’s friend !!

  3. Comment by Dipankar Banerjee

    Chobi aar kobita’r khub bhalo mel-bondhon.

  4. Comment by Aparajita

    Nice article

Leave a comment

If you want to leave a feedback to this post or to some other user´s comment, simply fill out the form below.

(required)

(required)